|
কক্সবাজার সীমান্তে এখনো থামেনি রোহিঙ্গা স্রোত
চঞ্চল
দাশগুপ্ত,কক্সবাজার প্রতিনিধি ।। সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭ ।।
মিয়ানমার রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচি ও সেনা প্রধান মিন অং হ্লিং এর
প্রতিশ্রুতি সত্বেও রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন
অব্যাহত রয়েছে।শনিবারও একাধিক রোহিঙ্গা গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে কয়েক শত
ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘরবাড়ি ও স্বজন হারা কয়েক
হাজার রোহিঙ্গা শনিবারও উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে
আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। শনিবার বিকেলে উখিয়ার নাফ নদীর আঞ্জুমান পাড়ার
সীমান্ত দিয়ে ৫/৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে প্রাণ
নিয়ে পালিয়ে এসে আঞ্জুমানপাড়া পালংখালীতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। শনিবার
সন্ধ্যায় এদের মধ্যে কালো মিয়া (৪২) এসেছে বুচিডং ফাতে গ্রাম থেকে। তারা এক
সাথে ৫/৬ হাজার লোক এসেছে। তিনি জানান আমাদের সাথে থাকা দুই জনকে সেনাবাহিনী
বুধবার দুপুরে গুলি করে হত্যা করেছে। দীর্ঘ ১১দিন কাদা, বন জঙ্গল, খাল বেয়ে
কোন রকমে জান নিয়ে পালিয়ে আসতে পারায় স্বস্তি বোধ করছে তারা সাথে আসা বুচিডং
থানার মিংগ্রি টং এলাকার আব্দুস শুক্কুর জানান ১১দিন হেঁটে আসতে আসতে প্রায়
সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সাথে থাকা কিছু চাউল মাঝে মধ্যে রান্না করে খেতে
পারলেও সকলেই ক্ষুধার্থ। কারন সাথে কারো কারো চাল, ডেকসি থাকলেও ধুয়ো উঠলে
সেনাবাহিনীর নজরে পড়ার ভয়ে রান্না করা সম্ভব হয়নি।
এদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে মাছের ঘেরের পাড়ে
কাদার উপর সন্তান প্রসব করে বুচিডং থানার নাইক্ষ্যংডং গ্রামের মোঃ জকরিয়া
(৩০) এর স্ত্রী লায়লা খাতুন। তিন দিনের শিশুকে নিয়ে স্বামী স্ত্রী দুইজন
ছুটেছে পালিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন দিকে। এখানে এসে কোন রকমে জানে বাঁচতে
পারায় তারা আল্লাহ ও বাংলাদেশ সরকার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। এদের সাথে আসা
বুচিডং মান্নার পাড়ার সোনা মিয়ার কোলে আড়াই বছরের হুমাইরা। হুমাইরার মা
আসার সময় হারিয়ে যাওয়ায় তার পিতা আব্দুস সালাম (২৮) তার স্ত্রীকে খোঁজতে
গেছে মেয়েকে রেখে। মেয়েটি বাবা মার জন্য কাদাকাটি করতে দেখা গেছে। বুচিডং
এলাকায় পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা জানান তাদের বুচিডং এলাকার বিভিন্ন
গ্রামের আরো কয়েক হাজার শরনার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বিভিন্ন পথে রয়েছে।
এদের সাথে মহিব উল্লাহ (৫২) জানান, গত তিন দিন ধরে তাদেরকে মিয়ানমার
সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা নো ম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশ
সীমান্তের কাছে কাটকিয়ে রাখে। এসব শরনার্থীদের মাঝে অধিকাংশ নারী ও শিশু।
বেশ কিছু গর্ভবতী মহিলা ও বৃদ্ধ রয়েছে। এসব লোকজনের মাঝে খাদ্য সংকটের
পাশাপাশি পানি শুন্যতা সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে রোহিঙ্গারা জানান।
গতকাল শনিবার রাখাইনের বুচিডং এর টং বাজার থানার মংগ্রিজি গ্রাম থেকে
টেকনাফের উলুবনিয়া নাফ নদী সীমান্ত দিয়ে ৩০/৪০ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে উখিয়ার
বালুখালী-২ শরনার্থী শিবির সংলগ্ন রাস্তার পাশে আশ্রয় নেয়। তাদের সাথে কথা
বললে মহিব উল্লাহ (৪৮) জানান বুচিডং এর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উঠানে
শুক্রবার জুমার নামাযের পূর্বে বেলা ১১টার দিকে একটি বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা
ঘটে। এ ঘটনায় কেউ হতা হত না হলেও স্থানীয় ভাবে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের
জুমার নামায পড়তে দেয়নি টং বাজার থানার পুলিশ। তারা জানান, বৃহস্পতিবার
রাতে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা মসজিদের উঠানে বোমাটি পুঁতে
রাখতে পারে। মিয়ানমারে রাখাইনে থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, শুক্রবার
সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা জুমা নামাযের পর বুচিডং এর নাইয়াং চং,
পাওয়া চং ও উত্তর মংডুর মেধি ও চাকমা কাটা রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিয়ে
জ্বালিয়ে দিয়েছে। ইতিপূর্বে এসব গ্রামে কয়েকদফা আগুন দিলেও শুক্রবার যে
কয়টি ঘরবাড়ি ছিল সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে নতুন ভাবে নাইয়াং চং গ্রামটি
সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয় বলে তারা জানান। বাংলাদেশ সীমান্তে উপারে তুমব্রুতেও
কয়েকটি রোহিঙ্গা ঘর জ্বালিয়ে দেয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার নোবেল জয়ী নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং
সান সুচি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষনে রাখাইনে সহিংসতায় লোক দেখানো
উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উক্ত ভাষনে তিনি ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাখাইনে আর কোন
সহিংস ঘটনা বা ঘরবাড়ি পোড়ানো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
একইদিন রাখাইনের রাজধানি আকিয়াবে সামরিক ও বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তাদের এক
সভায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান মিন অং হ্লিং রাখাইনের সকল সম্প্রদায়ের
মাঝে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বলেন। মিয়ানমারের উভয় নেতা একই দিন
বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের যথাযথ প্রমাণপত্র যাচাই
বাচাই সাপেক্ষে ফিরিয়ে নেওয়া কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য ও
প্রতিশ্রুতির তিন দিনের মাথায় রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা মুসলিম
এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী ও জাতীয়তাবাদি উগ্রবৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের মানবতা
বিরোধী অপরাধ কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পালিয়ে আসা
রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকার ও সে দেশের সেনাবাহিনীর কথার উপর আস্তা রাখতে
পারছে না। সে দেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষনাকে তারা নাটক
বলে অবহিত করেছে।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly
prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal
action.
|